পারিবারিক সুখের জন্য ১৭ টি শুদ্ধাচার চর্চা করুন আজ থেকেই
খেয়ালী ডটকমের শুদ্ধাচার বিভাগের নিয়মিত আয়োজনে অংশ হিসেবে আজকে আলোচনা করবো পারিবারিক সুখের জন্য ১৭ টি শুদ্ধাচার চর্চা নিয়ে যা আপনার পরিবারকে করে তুলবে সুন্দর এবং সুখী।
পারিবারিক সুখের জন্য ১৭ টি শুদ্ধাচার চর্চা করুন আজ থেকেই কারণ আমাদের প্রত্যেকের জীবনে পরিবারের একটা অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। পরিবারের শান্তি বা সুখই একটা মানুষের অন্যতম চাওয়া।
পরিবারের সকল সদস্যকে শুদ্ধাচার শিক্ষা দেওয়ার জন্য নিজেই প্রথম শুদ্ধাচারের চর্চা শুরু করতে হবে তাহলে প্রত্যেকের মধ্যেই আস্তে আস্তে এর অভ্যাস গড়ে উঠবে আর আপনার পরিবার হয়ে উঠবে সামাজিকভাবে দৃষ্টান্তমূলক একটি পরিবার।
তাহলে কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করি পরিবারের জন্য ১৭ টি শুদ্ধাচার নিয়ে আলোচনা-
১. নতুন দিনের জন্য শুকরিয়া আদায় করুন;
প্রত্যেকদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আপনি নতুন জীবন প্রাপ্তির জন্য প্রভুর কাছে প্রার্থনা করুন। আপনি যে ধর্মেরই হোক না কেন আপনাকে অবশ্যই ঘুম থেকে উঠতে পারার জন্য আপনার প্রভুর কাছে প্রার্থনা করা উচিত।
কারণ আপনার আশপাশে অনেকেই আছে যারা আপনার সাথেই ঘুম থেকে উঠতে পারেনি। তাই ঘুম থেকে ওঠার পরেই আল্লাহর কাছে বা আপনি যে ধর্মের হন সেই ধর্মের প্রভুর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করো।
বলুন- আলহামদুলিল্লাহ, থ্যাংকস গড, অথবা আল্লাহ বা প্রভু তোমাকে ধন্যবাদ নতুন একটি সুন্দর দিন উপহার দেওয়ার জন্য।
২. পরিবারের ছোট বড় সবার সাথেই সালাম শুভেচ্ছা বিনিময়;

সালাম বা শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে সম্পর্কে দূরত্ব কমে আসে। আর এই অভ্যাসটা পরিবার থেকেই শুরু হওয়া উচিত।
সুন্দর একটি পারিবারিক জীবনের জন্য প্রতিদিন পরিবারের সকল সদস্যদের মাঝে দেখা হলেই সালাম ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
পরিবারের লোকজন আপনার কাছ থেকে শিখে এই সমাজের বিভিন্ন জায়গায় এই অভ্যাস এর প্রয়োগ করবেন।
এতে করে সামাজিক ভাবে তার অবস্থান দৃঢ় হবে এবং সবাই তাকে ভালো চোখে দেখা শুরু করবে।
৩. বাসা থেকে বের হওয়ার সময় অবশ্যই অন্যান্য সদস্যদের অবগত করুন;
কর্মব্যস্ত জীবনে জীবিকার তাগিদে আমাদের অবশ্যই বাসা থেকে বের হয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে এবার যে যেরকম কাজ করে সেই কাজে যেতে হয়।
বাসা থেকে বের হওয়ার সময় অবশ্যই আমাদের পরিবারের বড় কোনো সদস্য যারা পরিবারের অভিভাবক এর দায়িত্বে আছেন তাদেরকে জানিয়ে বের হওয়া উচিত। যেন আপনার অনাকাঙ্ক্ষিত কোন সমস্যা হয় তারা খুব সহজেই আপনার কাছে পৌঁছাতে পারে বা আপনাকে সহযোগিতা করতে পারে।
তাই বাসা থেকে বের হতে অবশ্যই সম্ভব হলে আপনার মা, বাবা, স্বামী অথবা স্ত্রী, এবং অন্য সদস্যদের বলে বের হবেন এবং কখন ফিরবেন সেই সম্ভাব্য সময়টিও নিশ্চিত করে যাবেন।
৪. বাসায় ফিরে সবার খোঁজ খবর নিন;
আপনার অনুপস্থিতিতে বাসায় কি পরিবর্তন হয়েছে বা কে কোথায় আছে অথবা কে কি করছেন তা জানার জন্য অবশ্যই বাসায় ফিরে আপনার বাসার সকলের খোঁজখবর নেয়ার চেষ্টা করুন।
এতে করে পারিবারিক ভাবে আপনার সকল সদস্যদের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় হবে এবং আপনি বাসার সার্বিক বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করবেন।
৫. কেউ ঘরে ঢোকার সাথে সাথে এই অভিযোগ পেশ করবেন না;
পরিবারের কোনো সদস্য ও দীর্ঘ সময় পর ঘরে ফিরলেন কোনভাবেই সাথে সাথে তার কাছে কোনো অভিযোগ দায়ের করা থেকে বিরত থাকুন। কর্মব্যস্ত এই জীবনে প্রত্যেকেই কোনো-না-কোনোভাবে কাজের চাপে বা সামাজিকভাবে বা যে কোন কারনে বিব্রত থাকতে পারে।
তাই পরিবারের কোনো সদস্য ঘরে ফেরার সাথে সাথে আপনি অভিযোগ প্রকাশ করলে সে তার প্রতুত্তরে ভয়ানক কান্ড ঘটিয়ে ফেলতে পারে অথবা সে এতে অনেক বিব্রত হতে পারে।
পরবর্তীতে বাসায় সময় নিয়ে ধীরে ধীরে তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আপনার সমস্যাটি তাকে অবগত করুন।
৬. পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করুন;
সৎকর্ম ব্যস্ত থাকলেও পারিবারিক যেকোনো অনুষ্ঠানে আপনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করবেন।
অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে সময় কমিয়ে এনে পারিবারিক যে কোনো সদস্যের বা যে কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করুন এতে করে পারিবারিক সম্পৃক্ততা বাড়বে এবং সমৃদ্ধি অর্জিত হবে।
৭. পরিবারের সাথে ন্যূনতম এক বেলা খাবার গ্রহণ;
যেখানে যত ব্যস্তই থাকি সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন আপনার পরিবারের সদস্যদের সাথে ন্যূনতম এক বেলা খাবার গ্রহণ করতে। সেটা হতে পারে সকালে, দুপুরে বা রাতে।
খাবার গ্রহনের সময় অবশ্যই পরিবারের সকল সদস্যদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার চেষ্টা করুন।
৮. প্রত্যেকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করুন;
পরিবারের ছোট বড় সকল সদস্যের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষায় সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখুন। কোনোভাবেই কোনো সদস্যের ডায়েরী, চিঠিপত্র, মোবাইল খুলে অথবা খোলা তা না দেখা থেকে বিরত থাকুন।
কারো কোন জিনিস পত্র আপনার দেখার প্রয়োজন হলে অবশ্যই তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তারপর তা দেখুন বা ব্যবহার করুন।
৯. পারিবারিক বিষয় ঐক্যমতে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন;
পারিবারিক যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বিষয়ে সকল সদস্যের মতামতকে সমান গুরুত্ব দিয়ে ওর কোমরে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন।
কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে সর্বাধিক মতামত আছে এদিকে রয়েছে সেটি কি সিদ্ধান্ত হিসেবে গণ্য করুন এতে আপনার সামান্য ক্ষতি হলেও তা মেনে নিন।
পরিবারের অধিকাংশ সদস্যদের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিয়ে যে কোন কাজ করার চেষ্টা করুন।
১০. খুঁটিনাটি বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করা;
পরিবারের সকল সদস্যের পছন্দ এক রকম হবে না তাই অবশ্যই খুঁটিনাটি যেকোনো বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করে পারিবারিক সুখের জন্য সর্বোচ্চ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। কোন অবস্থাতেই কোনো ছোটখাটো বিষয়ে অনড় অবস্থানে থাকবেন না।
যেমন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এসি চালানো, ফ্যানের স্পিড, খাবারের ঝাল কম ইত্যাদি বিষয়ে যতটুকু সম্ভব ছাড় দেয়ার চেষ্টা করুন।
১১. পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করুন;
পরিবার একটি সংঘ। এখানে সকল ধরনের সদস্য হয়ে বসবাস করে। প্রত্যেকের সমস্যা বা চাহিদা আলাদা আলাদা রকমের হতে পারে।
তাই পরিবারের সদস্য হিসেবে আপনি অবশ্যই পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সুবিধা অসুবিধা গুলো মাথায় রেখে কাজ করার চেষ্টা করুন।
পরিসর যত ছোট হোক বা বড় হোক না কেন পারিবারিক সুখের জন্য সকল সদস্যের সুবিধাদি মাথায় রেখে চলা প্রত্যেক সদস্যের কর্তব্য।
১২. খোঁচা দেওয়া, কটুতর্ক বা নেতিবাচক মন্তব্য থেকে বিরত থাকুন;
পরিবার মানুষের অনুপ্রেরণার জায়গা। এখানে প্রত্যেকে কর্মজীবন এবং ভবিষ্যতে বেঁচে থাকার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে। তাই পরিবারের কোনো সদস্যের কোনো ছোটখাটো বিষয়ে খোঁচা দেওয়া বা তার কোনো সমস্যায় কত তর্ক করা বা তার কোন অর্জনে বা চেষ্টায় নেতিবাচক মন্তব্য করা অত্যন্ত খারাপ একটি দিক।
পরিবারের সদস্যদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যেকোনো বিষয়ে কোন বিতর্ক করা, খোঁচা দেওয়া বা নেতিবাচক মন্তব্য থেকে বিরত থাকুন।
১৩. খারাপ আচরণ থেকে দূরে থাকুন;
পরিবারের সদস্যদের শালীন আচরণ সামাজিকভাবে পরিবারকে উচ্চ শিখরে নিয়ে যায়। মানুষের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিও অর্জন করে।
কোনভাবেই পরিবারের সদস্যদের গালিগালাজ, ধমক দেওয়া, অশ্লীল কথাবার্তা বলা ও মন্দ কথার চর্চা থেকে বিরত থাকা উচিত।
এই ধরনের আচরণ পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টির অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। তাই কোনভাবেই পরিবারের সদস্যদের গালিগালাজ, অশালীন মন্তব্য বা মন্দ আচরণ করবেন না।
পারিবারিক সুখের জন্য এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৪. রান্না নিয়ে সমালোচনা করবেন না;
রান্না একটি শিল্প। পরিবারের সকল সদস্য এ বিষয়ে সমান পারদর্শী নাও হতে পারে। ধীরে ধীরে এই শিল্পের দক্ষতা অর্জন করতে হয়। পরিবারের কোন সদস্যের রান্না নিয়ে সমালোচনা বা তিরস্কার করা থেকে বিরত থাকুন।
- আরও পড়ুনঃ মিনিয়েচার চিত্র কলা কাকে বলে
সম্ভব হলে তাকে এই ক্ষেত্রে একই ভাবে আরো বেশি সমৃদ্ধি অর্জন করা যায় বা রান্না কে আরো বেশি সাহায্য করা যায় প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করুন অথবা কৌশলে তাকে বলুন।
১৫. নিজের কাজ নিজেই করার অভ্যাস গড়ে তোলা;
আপনার নিজের কোন কাজ পরিবারের অন্য সদস্যদের ওপর চাপিয়ে দিবেন না। মনে রাখবেন আপনার কাছে যে বিষয়টি বিরক্ত লাগে তার কাছেও সেটি খারাপ লাগতে পারে। পরিবারের সকল সদস্যের কোন না কোন কাজে ব্যস্ত থাকে তাদের প্রত্যেকেরই কোন না কোন বিষয়ে কাজ থাকে।
তাই আপনার নিজের কোন কাজ পরিবারের অন্য সদস্যদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে তার বিরক্তির কারণ হওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং নিজের কাজ সব সময় নিজেই করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
১৬. পরিবারের সকল সদস্যের বিশেষ দিন মনে রাখা ও শুভেচ্ছা বিনিময়;
আপনার পরিবারের সকল সদস্যের বিশেষ বিশেষ দিনগুলো মনে রাখুন এবং তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করুন প্রয়োজনে সম্ভব হলে তাকে এই বিশেষ দিনে উপহার দেয়ার চেষ্টা করুন।
সম্ভব হলে পরিবারের সদস্যদের বিশেষ দিনে শুভেচ্ছা কার্ড প্রিন্ট করে তাকে দিন, মুঠোফোনে মেসেজ দিয়েন অথবা কল করে তাকে সরাসরি শুভেচ্ছা জানান।
এতে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে আপনার সম্পর্ক সমৃদ্ধ হবে এবং একটি সুন্দর আদর্শ পরিবার গঠনে আপনার ভূমিকা কাজে লাগবে।
১৭. ধর্মীয় চর্চা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন;
আপনি যেই ধর্মেরই হোক না কেন অবশ্যই আপনার পরিবারে সেই ধর্মের ধর্মীয় অনুভূতি গুলো বা বিধি নিষেধ গুলো চর্চা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং পরিবারের সকল সদস্যদের সাথে নিয়ে তার চর্চা করুন।
পরিবারের ধর্মীয় মূল্যবোধ সৃষ্টি করুন এবং ধর্মে উল্লেখিত বিধিনিষেধ গুলোর আলোকে পরিবার পরিচালনা করুন এতে আপনার পরিবার একটি আদর্শ পরিবার এ পরিণত হবে এবং সামাজিকভাবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লাভ করবে।
প্রিয় বন্ধুরা এই ছিল আপনাদের জন্য আমাদের পরিবারের সুখের জন্য 17 টি শুদ্ধাচার চর্চা সংক্রান্ত আলোচনা আশা করছি এগুলো আপনার জীবনে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আপনার পরিবারকে একটি আদর্শ পরিবার এ পরিণত করবেন।
আমাদের পরবর্তী প্রবন্ধগুলো পাওয়ার জন্য ফেসবুক পেইজ লাইক এবং ফলো করে রাখুন এবং ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।
আপনার জন্য আরও কিছু তথ্য:
অন্যান্য কুইজের উত্তরগুলো ধারাবাহিক ভাবে দিলে সবাই উপকৃত হবে।